• E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৪ অপরাহ্ন

×

কুরআন সুন্নাহর আলোকে বন্যা-পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় 

  • প্রকাশিত সময় : বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট, ২০২৪
  • ৬৮ পড়েছেন
মাওঃ মুহাঃ ফজলুর রহমানঃ
দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে কাজ করছেন সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ারসার্ভিস এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। বন্যা-দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসা এ সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কর্তব্য। বরং তা মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি কোনো মুমিনের বিপদ দূর করে তবে আল্লাহ তার কিয়ামত-দিবসের বিপদ দূর করবেন।’ তাই আমাদের স্মরণ রাখা উচিত বালা-মুসীবতে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। সুতরাং এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হচ্ছে প্রথমত আল্লাহর দিকে খুব বেশি রুজু করা এবং কর্তব্য-সচেতন হওয়া। বায়ু আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা প্রবাহিত হয়। পানি আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা বর্ষিত হয়। বায়ু ও পানি ছাড়া যেমন মানুষের জীবন অচল তেমনি এই পানি-বায়ুই হতে পারে তার জীবননাশেরও কারণ। আল্লাহর হুকুমের কাছে মানুষ কত অসহায়। তবু মানুষ গর্ব করে। অহঙ্কারে লিপ্ত হয়। এই অহঙ্কারেরই এক দিক হল, বিপদাপদেও সচেতন না হওয়া, আল্লাহমুখিতা অবলম্বন না করা।
প্রকৃতি আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহরই হুকুমে তা পরিচালিত। কাজেই আল্লাহর দিকে রুজু করা এবং তাঁর কাছে মুক্তির উপায় অন্বেষণ করা মুমিনের কর্তব্য। আল্লাহর হুকুম দুই প্রকারের : প্রাকৃতিক হুকুম এবং করণীয়-বর্জনীয়ের হুকুম। জীবন ও জগতে আল্লাহর ইচ্ছাই কার্যকর, তাঁর ইচ্ছাকে রদ করার কেউ নেই। জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনে এই সত্য পুনঃপুনঃ প্রকাশিত। কাজেই তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা কর্তব্য। বিপদাপদ আল্লাহরই তরফ থেকে- এই উপলব্ধি মানুষের মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করে। আর আল্লাহর ভয়ই পারে মানুষের কর্ম ও আচরণকে সংশোধন করতে। যে বান্দা ক্ষণস্থায়ী জীবনের নানা দৃষ্টান্ত থেকে আল্লাহর পরিচয় লাভ করে এবং তাঁর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করে সে চিরস্থায়ী জীবনে মুক্তি ও সফলতা অর্জন করে। পক্ষান্তরে যে গাফিল ও উদাসীন থাকে এবং অবাধ্যতা ও নাফরমানীর মধ্যে সময় কাটায় সে চিরস্থায়ী জীবনে ব্যর্থ ও বন্দী হয়। কাজেই মানুষের কর্তব্য, জীবন ও জগতে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা ও উপলব্ধি অর্জন করে নিজ করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং আল্লাহর ফরমাবরদারীর দিকে প্রত্যাবর্তন করা।
আল্লাহর হুকুমে মানুষ যখন বিপদাপদে আক্রান্ত হয় তখন তার অসহায়ত্ব প্রকাশিত হয়ে পড়ে, ঐ সময় আল্লাহ মহানের দিকে প্রত্যাবর্তন তার জন্য সহজ হয়ে যায়। কাজেই এ সময় আল্লাহমুখী হওয়াই স্বাভাবিকতা এবং এটিই মুমিনের গুণ। আর এ অবস্থাতেও আল্লাহর দিকে রুজু না করা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ। এ বিপদের চেয়ে এটা আরও বড় বিপদ। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- অতপর যখন তাদের কাছে আমার (পক্ষ হতে) সংকট আসল, তখন তারা কেন অনুনয়-বিনয় করল না? বরং তাদের অন্তর আরও কঠিন হয়ে গেল এবং তারা যা করছিল তাদের কাছে শয়তান তা শোভনীয় করে দিল। -সূরা আনআম, (৬) : ৪৩ বিপদাপদে দ্বিতীয় করণীয় হচ্ছে, বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কে জানে, আগামীকাল আমার ওপরও বিপদ আসবে না? এই বিপদ যেমন আল্লাহর হুকুম তেমনি বিপদে বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানোও আল্লাহর হুকুম। কাজেই এই সময় বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের বড় উপায়। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ঐ পর্যন্ত বান্দার সাহায্যে থাকেন যে পর্যন্ত বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’। কাজেই বিপদাপদে যে অন্যের পাশে দাঁড়ায় সে আল্লাহর কৃপাধন্য হয়ে যায়।
আল্লাহ তো কারো মুখাপেক্ষী নন। সর্ব প্রকার মুখাপেক্ষিতা থেকে তিনি চিরমুক্ত। তিনি ইচ্ছে করলে এইসব বিপদাপদে কিছুই হত না। কিন্তু দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনকে তিনি বানিয়েছেন  সুখ-দুঃখ এ দুয়ের সমষ্টি। যাতে মানুষ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার করণীয় পালন করে এবং চিরস্থায়ী জীবনের নাজাত ও নাজাহ-মুক্তি ও সাফল্য অর্জন করে। এখন দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কর্তব্য, বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসা। বিপদগ্রস্ত মানুষ অমুসলিম হলেও তার সহযোগিতা কাম্য ও ধর্মীয় বিধানে ছওয়াবের কাজ। এটা তার অনৈসলামিক কর্ম ও বিশ্বাসের প্রতি নমনীয়তা  নয়, এটা সৃষ্টির প্রতি দয়া ও বিপদগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতি। ইসলামের সৌন্দর্য এখানেই যে, এতে দ্বীন ও ঈমানের ক্ষেত্রে অনমনীয়তা আর বিপদগ্রস্তের প্রতি সহানুভূতির মাঝে কোনো বিরোধ নেই। ইসলামের এই মানবিক শিক্ষার কারণেই আমাদের দেশের দ্বীনী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখা যায়, শত সঙ্কট ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সীমিত সামর্থ্য নিয়ে দুর্গত মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে এবং প্রচলিত প্রচার-প্রচারণাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা ও দুস্থ মানবতার পাশে দাঁড়াবার প্রেরণাকে সম্বল করে কাজ করতে। এক্ষেত্রে তাদের চিন্তায় মুসলিম-অমুসলিমের পার্থক্য থাকে না, দুস্থ বিপদগ্রস্তের সেবা ও সহযোগিতাই লক্ষ্য থাকে।
আমরা মনে করি, বর্তমান পরিস্থিতিতেও দ্বীনী ব্যক্তিত্ব ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ সামর্থ্য  অনুযায়ী এগিয়ে আসবেন এবং আল্লাহর কাছে প্রভূত আজর ও ছাওয়াবের হকদার হবেন। বন্যাদুর্গতের পাশে দাঁড়াবার এক বড় উপায় হচ্ছে, এই মুহূর্তে তাদের পাশে গিয়ে ঊদ্ধার করা,খাদ্য, পানীয়ের ব্যবস্থা করা ও বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। এই বিষয়েও  সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগেরও প্রয়োজন আছে। ব্যক্তিগতভাবেও অনেকে এই উদ্যোগ নিতে পারেন। দেশে এমন অনেক বিত্তবান ব্যক্তি আছেন, যারা ইচ্ছে করলেই শত শত মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন। কাজেই  সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসলে লক্ষ লক্ষ দুর্গত মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব হতে পারে।  আল্লাহ তাআলা সকলকে নেক কাজের তাওফীক দান করুন- আমীন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক,পশ্চিম বানিয়াখামার দারুল কুরআন বহুমুখী মাদ্রাসা,খতীব বায়তুল আমান জামে মসজিদ,চকমাথুরাবাদ,পিপড়ামারী,হরিণটানা, খুলনা।

আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর

ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: BD IT SEBA